6.1 C
New York
Thursday, March 13, 2025

বান্দরবানে বালু উত্তোলন হুমকিতে পরিবেশ

বান্দরবানের লামার পাহাড়ি ঝিরি খাল থেকে অবধৈভাবে বালু উত্তোলন করছে প্রভাবশালীরা। উপজেলার ৫০টির অধিক পয়েন্ট থেকে অবাধে দিন-রাত বালু উত্তোলন করা হচ্ছে। প্রশাসনের অভিযানের পরও কিছুতেই থামছে না বালু লুট। বালু লুটের সুবিধার্থে শক্তিশালী সিন্ডিকেট সংগঠন করা হয়েছে। ফলে হুমকরি মুখে পড়েছে পরিবেশ।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, লামা উপজেলার পার্শ^বর্তী চট্টগ্রামের লোহাগাড়া, সাতকানিয়া উপজেলা ও স্থানীয় একটি প্রভাবশালী সন্ডিকিটে প্রশাসনরে অনুমোদন ছাড়া দীর্ঘদিন ধরে বালু অবধৈভাবে উত্তোলন করছে। ফলে ওইসব খালে পানির স্রোত নেই, খাল হারাচ্ছে তার প্রকৃত রূপ। গতি হারিয়ে বিলীন হচ্ছে বসতবাড়ি, ফসলি জমি, সড়ক ও ব্রিজ। বালু উত্তোলনের বিষয়টি স্থানীয় প্রশাসন দেখেও কোনো কার্যকর ভূমকিা রাখছে না বলে অভিযোগ তুলেছেনে ক্ষতিগ্রস্তরা।

স্থানীয়রা জানান, লামা উপজেলার পার্শ^বর্তী লোহাগাড়া ও সরই ইউনিয়নের আওয়ামী লীগ ও বিএনপির কিছু সুবিধাবাদী ব্যক্তিদের নিয়ে সিন্ডিকেটকে পুনর্গঠন করা হয়েছে। বর্তমানে বেপরোয়াভাবে উপজেলা সরই ও আজিজনগর ইউনিয়নের ৫০টির অধিক পয়েন্ট থেকে বালু লুট করা হচ্ছে। বালু লুটের স্বার্থে সিন্ডিকেটের নেতৃত্বে পরিবর্তন আনা হয়েছে। প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে সমন্বয় রাখতে সক্ষম এমন ব্যক্তিদের বালু লুট সিন্ডিকেটের নেতৃত্বে আনা হয়েছে। বর্তমানে বালু পাচারকারী প্রতিটি সিন্ডিকেটের নেতৃত্বে আছে সরই ইউনিয়নের বিএনপির নামধারী কিছু সুবিধাভোগী ব্যক্তি। এখন পর্যন্ত পরিবেশ অধিদপ্তর লামা উপজেলার বালু লুটকারীদের বিরুদ্ধে উল্লেখযোগ্য কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি বলে বিভিন্ন মহলের অভিযোগ। পরিবেশ অধিদপ্তরের নিষ্ক্রিয় ভূমিকার কারণে আগের যেকোনো সময়ের তুলনায় বর্তমানে ব্যাপকহারে বালু লুট হচ্ছে বলে স্থানীয়রা জানিয়েছেন। উপজেলা প্রশাসন ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে বালু পাচারকারীদের বিরুদ্ধে দফায় দফায় অভিযান পরিচালনা করলেও থেমে থাকেনি বালু উত্তোলন। প্রশাসন অভিযান চালিয়ে যেসব পয়েন্টে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে জরিমানা করেছে, সেসব পয়েন্ট থেকেও বালু উত্তোলন থেমে থাকেনি।

এসব বালু চট্টগ্রামের বিভিন্ন জেলা ও চট্টগ্রাম মহানগরীতে পাচার করা হয় বলে জানা গেছে।

উপজেলার সরই ইউনিয়নের আন্দারী বাতখোলা, বাইঘর দোকান কমিউনিটি ক্লিনিকের পাশের মসজিদভিটা, ভরা গোদা, ৪নং ওয়ার্ডের কমলা খোলা, ৭নং ওয়ার্ডের জোড়মনিপাড়া, জোড়মনিপাড়া ব্রিজের পূর্ব পাশের ৫নং ওয়ার্ডের হারেস কোম্পানির মৎস্য খামারের দক্ষিণের ৩০টির অধিক পয়েন্টে, আজিজনগর পূর্ব চাম্বি, আজিজনগরের বিভিন্ন ছড়া ও খালের ২০টির অধিক পয়েন্টে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করা হচ্ছে। মাঝে মাঝে ভ্রাম্যমাণ আদালতে তাদের জরিমানা করা হয়। কিন্তু বালু লুটকারীরা জরিমানা দিয়ে পুনরায় একই কাজে ফিরে যায়। অভিযোগ উঠেছে পরিবেশ অধিদপ্তরের লোকজনের সঙ্গে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনকারীদের বিশেষ সখ্য গড়ে উঠেছে। যে কারণে বেপরোয়াভাবে সরই ও আজিজনগর থেকে বালু উত্তোলন করে পরিবেশের ক্ষতিসাধন করলেও পরিবেশ অধিদপ্তর বালু পাচারকারীদের বিরুদ্ধে উল্লেখযোগ্য কোনো ধরনের ব্যবস্থা নেয়নি।

স্থানীয়রা আরো জানিয়েছেন, বালু পাচারকারী সিন্ডিকেট জেলা সদরে গিয়ে পরিবেশ অধিদপ্তরের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করে চলেছে। ফলশ্রুতিতে প্রশাসনের পক্ষ থেকে বালু পাচারকারীদের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করা হলেও পরিবেশ অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে কোনো ধরনের প্রসিকিউশন দেওয়া হচ্ছে না।

লামা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মঈন উদ্দিন ও সহকারী কমিশনার (ভূমি) রুপায়ন দেব সরই ও আজিজনগরের পূর্ব চাম্বির ৬টি পয়েন্ট থেকে গত শনিবার সাড়ে তিন লাখ ঘনফুট বালু জব্দ করেন। একই সময়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আজিজনগর পূর্ব চাম্বি পয়েন্টে দেড় লাখ ঘনফুট বালু ঘটনাস্থলে দুই লাখ নব্বই হাজার টাকা নিলাম দেন। স্থানীয়রা আরো অভিযোগ করেন, সরই ইউনিয়নের ডলু খাল, সরই খালসহ বিভিন্ন প্রবহমান ঝিরি খাল থেকে একটি সিন্ডিকেট গত ৬ মাস ধরে অব্যাহতভাবে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করছে। বালু উত্তোলন ও পাচারের সঙ্গে লোহাগাড়া ও সরই ইউনিয়নের বিএনপির একটি সুবিধাভোগী চক্র এবং আওয়ামী লীগের কিছু চিহ্নিত ব্যক্তি জড়িত রয়েছে বলে জানা গেছে। অবৈধভাবে বালু উত্তোলন ও পাচারের ফলে সরই ইউনিয়নের অনেক রাস্তা-ঘাট নষ্ট হয়ে গেছে। প্রতিদিন রাতেরবেলায় শত শত ট্রাক বালু সরই থেকে চট্টগ্রাম জেলার বিভিন্ন জায়গায় নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। অভিযোগ উঠেছে স্থানীয় আইনশৃঙ্খলা রক্ষার কাজে নিয়োজিতদের কিছু অপরাধপ্রবণ ব্যক্তি বালু লুটকারীদের সহযোগিতা করে যাচ্ছে।

পরিবেশ অধিদপ্তর বান্দরবানের সহকারী পরিচালক রেজাউল করিম জানান, বালু পাচারকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য পরিবেশ অধিদপ্তর চট্টগ্রামের পরিচালকের কাছে সুপারিশ করা হয়েছে।

লামা উপজেলার সহকারী কমিশনর (ভূমি) রুপায়ন দেব জানান, বালু লুট, পাহাড় কর্তন ও পরিবেশের ক্ষতিসাধনকারীদের বিরুদ্ধে অভিযান অব্যাহত আছে। লামা উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মঈন উদ্দিন জানান, সরই এলাকার কয়েকটি পয়েন্ট থেকে জব্দকৃত বালু জেলা প্রশাসকের অনুমোদনক্রমে নিলামে বিক্রি করা হবে। পরিবেশ বিনষ্টকারীদের কোনোভাবেই ছাড় দেওয়া হবে না।

Related Articles

Stay Connected

0FansLike
0FollowersFollow
0SubscribersSubscribe
- Advertisement -spot_img

Latest Articles